Nari (নারী) – Kabita collage Lyric Written Update on BengaliLyrics.Net
চারদিকে ভয় আর ভয়-
যদি পুত্র না হয়,
একটাই তো লিঙ্গ আছে মোটে –
সবোধ বেদিনীর অন্ধকারে সপাতে ঢুকিয়ে দেয় দ্বারে –
ছুরি, কাচি, সাঁড়াশি যা জোটে,
না হওয়া তুলতুলে হাত-বুক-পেট- চোখ- যোনী, মাথা,
ভেসে চলে যমুনার স্রোতে আমাদের মহান ভারতে।
তবুও বেঁচে আছি ,
ফুটপাতে টায়ার জ্বালিয়ে ভাত ফুটোয় যে অর্ধনগ্ন নারী তাকে বলি “বেঁচে থাকো”,
মুখে স্নো – পাওডার মেখে পার্কের বেঞ্চে বসে থাক উৎসুক রমনীকে বলি “বেঁচে থাকো “,
শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে অলংকিতা দুক্ষিতাকে বলি “বেঁচে থাকো “,
মধ্যরাতে ঘরে ফেরা বার মাতালের অনগ্ন বধুকে বলি “বেঁচে থাকো”,
“বেঁচে থাকো” নারী তুমি “বেঁচে ওঠো”,
প্রচন্ড “বেঁচে ওঠো”,
আমি লিপস্টিক – আইসেদ – ফেসিয়াল,
আমি পার্স্টিক,
আমি হার কাটা লেন,
নিভৃত জোস্নার নির্জনতম অশ্রু,
আমি বৌঠান মিরা,
বনলতা সেন।
পুরুষ আমার প্রেমিক ও চিরশত্রু,
তবুও তাদেরিই সবচেয়ে ভালোবাসি,
পদপল্লবে ওরা চুমু খায়,
তবুও আমরা ওদের বৌ- মেয়ে- সেবাদাসী।
আমি সেই মেয়েটি –
যে গত কোন শতাব্দীতে পাঁচ বছর বয়সে মালা দিয়েছিল গঙ্গাযাত্রীর গলায়,
কুলিন ব্রাহ্মণে তিনশো পঁয়ষট্টি তম স্ত্রীর অন্যতমা হয়ে স্বামীর গরবে হয়েছি গর্বিণী,
একাদশেতে নবয ,
দশমীর বালিকা তৃষ্ণায় আটক ঘরের মাটি লেহন করতে করতে প্রাণ ত্যাগ করেছি,
সন্তানের পর সন্তান জন্ম দিতে দিতে দিতে যন্ত্রনায় মুখ থুবড়ে পরেছি সুতিকাগারে ,
জ্বলে পুরে মরেছি স্বতিদাহে ।
আমি বুঝতে পারিনি যে চাকরীর যায়গায় নিজের কাজের কৌশলতা দেখাতে নেই,
আমি বুঝতে পারিনি আমার প্রেমিককে তার প্রেমপত্রের বানান ভুল গুলো ধরিয়ে দেওয়াটাই আমার ভুল হয়েছিল,
আমি বুঝতে পারিনি যে আমি যদি কবি হতে চাই আমার বন্ধুরা বলবে “ওটা কবিতা হয়নি-পদ্যে হয়েছে”,
আমি বুঝতে পারিনি এই শতাব্দীতে এসে দাড়িয়েও এই পুরুষ শাসিত সমাজ বুদ্ধিমতীদের জন্য অপ্রস্তুত।
আমি মৃত্যু দেখেছি,
আমি পাপ দেখেছি,
আমি পংক দেখেছি,
ট্রেনে -বাসে ভিড়ে অচেনা হাত আমাকে স্পর্শ করে,
যেনো আমার শরীল আমার নয় –
পুরুষের বিচরণ ক্ষেত্র শুধু,
প্রতাবাদ করলে ঘিরে উপদেশ নির্দিষ্ট কামরা বা সিটে যাওয়ার,
শূন্য থেকে শূন্যের ভিতর আর আমি হেঁটে যাই,
আর জনে জনে জিজ্ঞেস করি –
“তোমাদের বাড়িতে মেয়ে আছে?
কেউ কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে তোমার কন্যার দেহে!
এতটু রাত করে বাড়ি ফেরা তোমার মেয়েটিকে কুপ্রস্তাব কেউ দিয়েছে অন্ধকান পাড়ার মোড়ে!,
তোমার মেয়ের ফেসবুক প্রোফাইল আছে?
কেউ হ্যাক করে পাসওয়ার্ড জেনে পর্ণ ছবি টানিয়ে দিচ্ছে তার দেয়ালে দেয়ালে! “
পথের উপর দিয়ে আমি হাঁটি শুধু এসব প্রশ্ন নিয়ে,
আর দেখি ধুলো উরে শুধু,
বালি উরে নিরুচ্চার শূন্যের ভিতর,
লিঙ্গভেদের ঘৃণা নিভে যাবে কবে?
ধর্ষকের চোখ থেকে কবে মুছে যাবে হিংস্রতায় পেতে চাওয়া দখলের আলো,
পৃথিবী জানে না এর উত্তর আজও।
নারী তুমি বেঁচে উঠো,
নিশ্বাস নাও অমল হাওয়া,
এই আকাশ তোমার,
আকাশের সব নক্ষত্র তোমার,
এ নদী – অরণ্য – কাশফুল তোমার,
এই ঝাউপাতা তোমার,
এই মেঘপুঞ্জ – এই জল হাওয়া তোমার।
আর যেন কোন নারীকে কেবল গন্তব্যে পৌছনোর জন্য পেরুতে না হয় এমন দুর্গম অরণ্য,
আর যেন পুরুষের গুহা থেকে এমন রক্তাক্ত বেড়ুতে না হয় কোন নারীকে,
এই মাঠ তোমার ,
এই শস্যক্ষেত্র তোমার,
এই আলপথ তোমার,
দিগন্ত অবদি যতদূর দেখো এসব তোমার,
তুমি যাদি নারী হও তুমি মৃত্যুকে অতিক্রম করে বেঁচে উঠো,
তুমি যদি মানুষ হও দুহাতের শেকল ছিড়ে একবার দাড়াও,
দু’হাতের শিকল ছিড় এ হাত তোমার,
দু’পায়ে দৌড়ে যাও -এই পা তোমার,
দু’চোখে জীবন দেখ-এই চোখ তোমার,
তুমি ঠাটা করে হাসো,
এই ঠোট -চোখ – গ্রিবার্গ তোমার,
তুমি আতন্ত তোমার,
তুমি আঙুল তোমার।
আজ আমি প্রোনাম জানাই সেই প্রথম আঙুলকে যার নাম “বর্ণপরিচয়”,
সেই অগ্নিশুদ্ধ পরমপরাকে –
সেই সব পুরুষ রমনীকে,
উনবিংশ শতাব্দীর অন্ধকার হাতরে জ্ঞানের আলো জ্বালিয়ে এক জন্মে যারা আমাকে জন্ম জন্মান্তের দরজা খুলে দিয়েছেন।
আমি আজ প্রেমের জন্য ফেলে যাচ্ছি “আরাম”,
শরপাঞ্জিত সাতান্নির জন্য ফেলে যাচ্ছি ” কৃতদাসের চপোচৌষ “,
জেগে থাকার জন্য ফেলে যাচ্ছি “ভাত-ঘুম “,
যন্ত্রনার জন্য ফেলে যাচ্ছি “সুখ “,
ঙ্জানের জন্য ফেলে যাচ্ছি “অন্ধকার”,
আনন্দের জন্য ফেলে যাচ্ছি “সাফল্য “,
অমৃতের জন্য “ঐসর্য্য “।
আমার এ চলার পথে দেবতারাও আতঙ্কে স্তব্ধ হয়ে বলতে থাকবে –
“বাবিভঙ্গ ভয়োং ঘোরাং মুক্ত কেশী চতুর্ভুজা, কালি কাঙ দসী নাঙ্গ মুন্ড মালাব বিভুসিতা”,
বীভৎস দাবানলের মধ্য দিয়ে আমি এগোতে থাকবো,
আর আমার এ চলার চারপাশে মুন্ডহীন অসংখ্য দেহ ছটফট করতে থাকবে,
সভ্যতার দেহ,
প্রগোতির দেহ,
উন্নতির দেহ,
সমাজের দেহ।
হয়তো আমি সেই মেয়ে,
হয়তো আমিই সেই মেয়ে,
হয়তোবা হয়তোবা হয়তোবা।
নারী
এটি একটি কবিতা কোলাজ,
কবিরা হলেনঃ রায়ান, বিথী চট্টোপাধ্যায়, কবিতা সিংঘা, রিহান কৌশিক , তসলিমা নাসরিন, শুভ দেশগুহপাদ্ধেয়।